হিঞ্চেশাক সূক্ষ্মলোমযুক্ত পানীয় উদ্ভিদ । তবে নোনা পানিতে জন্মায় না । কান্ড ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত লম্বায় বাড়ে । বহু শাখাপ্রশাখাবিশিষ্ট এবং প্রত্যেকটি গাঁটে শিকড় জন্মায় । পাতা ১ থেকে ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় । মোট দুটি করে পাতা ডগার থেকে পাশাপাশি সাজানো থাকে । পাতা সবগুলো চওড়ায় সমান হয় না । পাতা গোড়ার দিকটা বেশ ছোট । রং গাঢ় সবুজ । বর্ষার সময় গাছ বেশ ভালভাবে বেড়ে ওঠে । শীতে মোটেই বাড়ে না । পাতা খেতে বেশ কষা এবং খুবই তিতা । শীতের প্রথম অবস্থায় ফুল ফোটে । ফুলের রং হয় সাদা । এরপর ফল ধরে । ফুল এবং ফল একক অবস্থায় থাকে । পুরানা পুকুর কিংবা ডোবা-নালায় এ গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায় ।
বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার
গায়ের দুর্গন্ধেঃ হিঞ্চেশাকের রস, সমুদ্রফেনের সাথে মিশিয়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয় ।
ঘামাচি ও ফুসকুড়ি হলেঃ গায়ে কাটা শীতকালে অথবা ঘামাচি গরমকালে খুবই কষ্টদায়ক । চামড়ার ওপরে উপরোক্ত অসুখের জন্যে হিঞ্চেপাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রসটা সারা শরীরে মাখলে দ্রুত উপকার হয় ।
খোস ও চুলকানি হলেঃ শীত এবং বর্ষাকালে এ দুটি রোগ মানুষের পক্ষে খুবই কষ্টদায়ক । হিঞ্চেশাকের রস ৩ থেকে ৪ চামচ সকালে একবার করে খেলে উপকার হয় । তবে নিয়ম করে অন্তত পনেরো দিন খাওয়া দরকার ।
রক্ত দূষিত হলেঃ হিঞ্চে শাকের পাতা ও ডাটা বেটে তার রস ২০ মিলি পরিমাণ এক চামচ চিনির সাথে মিশিয়ে সকালে একবার করে খেলে দুষিত রক্ত পরিষ্কার হয় ।
কোমরের যন্ত্রণায়ঃ কোমরের ঠিক নিচে ব্যথা অথবা যন্ত্রণা, পায়ের পেশীতে রাতের দিকে টান ধরে, এসব ক্ষেত্রে হিঞ্চেশাকের রস ৩ চামচ সামান্য গরম করে সকালের দিকে খালি পেটে খেলে সব উপসর্গ দূর হয় । তবে অন্তত তিন মাস নিয়ম করে খেয়ে যেতে হবে ।
লিভার দুর্বল হলেঃ লিভার বা যকৃত দুর্বল হলে শরীরে নানা ধরণের রোগ দেখা দেয় । লিভারকে সবল ও সুস্থ রাখতে পারলে মানুষ এক দিকে যেমন বহুরোগের হাত থেকে রেহাই পায় তেমনি শরীরও ভাল থাকে । হিঞ্চেশাক ১০০ গ্রাম কুচি কুচি করে কেটে ১৫০ মি লি পানিতে পরিমাণ মত লবণ দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে । পানি ফুটে এক কাপ পরিমাণ হলে পাত্রটি চুলা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে । ঠান্ডা হলে ভাত খাবার আগে ৪ থেকে ৫ ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে খেলে লিভার সবল হবে । অবস্থা বুঝে দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিয়ত খাওয়া দরকার ।
বসন্ত রোগের আক্রমণেঃ শরীরে দুই একটি গুঁটি দেখা দিলে অর্থাৎ রোগের প্রবল অবস্থায় শ্বেতচন্দন গুড়া দেড় থেকে দুই গ্রাম এবং হিঞ্চেশাকের রস আধ কাপ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে তাড়াতাড়ি গুঁটি বের হয়ে যায় ।
পিত্ত বাড়লেঃ হিঞ্চে পাতাকে বেটে তার রস ৩০ মিলি এবং গরু বা ছাগলের দুধ অবশ্যই গরম করে এবং ঠান্ডা অবস্থায় ৫০ মিলি এ দুটি একসাথে মিশিয়ে রোজ খেলে শরীরে পিত্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে আসে । গনোরিয়া রোগের ক্ষেত্রে একই নিয়মে এবং পরিমাণে খেলে উপকার পাওয়া যায় ।