বেতোশাক
সাদাবর্ণ ও রক্তবর্ণ বেতোশাক, মধুর রস ক্ষারযুক্ত, কটুবিপাক, অগ্নিদীপক,পাচক,
রুচিপ্রদ, লঘু, শুক্র ও বলকারক, সারক এবং প্লীহা, রক্তপিত্ত, অর্শ, ক্রিমি ও
ত্রিদোষ নাশক । যে বেতোশাকের পাতা বড় ও রক্তবর্ণ, কবিরাজী মতে শাকের মধ্যে এটি
সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ।
বেতো গাছ গুল্মশ্রেণীর এবং খুবই ছোট ধরণের উদ্ভিদ । ভাল সারযুক্ত মাটিতে তিন ফুট
পর্যন্ত লম্বা হয় । তবে সাধারণ ভাবে এবং বিনা যত্নে এ গাছ এক থেকে দুই ফুটের বেশি
লম্বায় বাড়ে না । পাতার দুই পাশে খাঁজ কাটা থাকে । মাঝের অর্থাৎ মূল শির থেকে দুই
দিকেই প্রথমে বড় এবং শেষের দিকে আরো একটি ছোট আকৃতির শিরা বের হয় । ফুলের বোঁটা
বেশ লম্বা । ডালের প্রতিটি গাঁট থেকে ফুল হয় । শীত পড়ার সাথে সাথে গাছে ফুল ফুটতে
শুরু করে । মাস খানেকের মধ্যে ফল ধরে । ফলের ভিতর ছোট পোস্তদানার মত কালো রং এর
বীজ থাকে ।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এ গাছ দেখা যায় । আলুক্ষেতে বেতো গাছ আপনা থেকেই
জন্মায় ।
বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার
রক্ত-অর্শেঃ গাছের কচি পাতা ও টাটকা ডাল তুলে এনে তাকে ভালোভাবে বেটে সে
রসটা ১৫ মিলি ছাগলের দুধ ৫০ মিলি উভয়কে এক সাথে মিশিয়ে দিনে একবার করে খেলে রক্ত
পড়া অবশ্যই বন্ধ হবে । সাত থেকে দশ দিন খেলে সহজে রক্তপাত হবে না ।
ছোট ক্রিমির উৎপাতেঃ সকালে খালি পেটে গাছের টাটকা রস চার চামচ সামান্য গরম
পানিতে একবার খেলে পায়খানার সাথে ক্রিমি বের হয়ে যাবে । তবে সব ক্রিমি এক সাথে
বের হয় না । ২ থেকে ৩ দিন একই নিয়মে খেতে হবে ।
হেচকি অথবা হিক্কা হলেঃ বারবার হেঁচকি উঠছে । কয়েক গ্লাস পানি পান করেও
হেঁচকি বন্ধ হচ্ছে না । পতিকার হিসাবে বেতোশাকের টাটকা রস দুই চামচ এবং গরুর
দুধের টক দই থেকে ঘোল তৈরি করে তার থেকে ৫০ মিলি একটা কাপে রেখে বেতোশাকের রস
মিশিয়ে দিতে হবে । এটা খাবার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে হেঁচকি সাথে সাথে
সম্পর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে । তবে ধূমপান, চা খাওয়া এবং পান-জর্দা খাওয়া দুই ঘন্টা
বন্ধ রাখতে হবে ।
আমাশয়েঃ শুকনা বেতোশাকের গুড়া আট থেকে দশ গ্রাম, এর সাথে তিন থেকে চার
চামচ টাটকা দাড়িম্বের রস মিশিয়ে খেলে আমাশয় রোগে খুব ভাল কাজ দেয় । রোজ সকালে
একবার এবং রাতে আরো একবার করে অন্তত পনেরো দিন খেতে হবে । যদি বার বার পায়খানা
হতে থাকে তবে প্রথম দুই দিন দিনে তিনবার করে চার ঘন্টা অন্তর খেতে হবে । এরপর
দুইবার করে খেলেই রো সেরে যাবে ।
বাতের জন্যে কাশি হলেঃ অনেকে বলে শুকনা কাশি । প্রকৃতপক্ষে সেটা ঠিক ধারণা
নয় । বাতের জন্য এ রকম কফ ছাড়া কাশি হয় । প্রতিদিন ভাত খাবার সময় বেতোশাক ১০০
গ্রাম পানি সিদ্ধ করে কোন রকম লবণ না মিশিয়ে চুমুক দিয়ে সিদ্ধ পানি এবং শাকটা
ভাতে মেখে খেলে কাশি থাকবে না এবং বাতেরও উপকার হবে ।
বেতো শাক বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে, যেমন সালাদ, স্যুপ, বা সেদ্ধ
করে। এটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি অপশন হিসেবে বিবেচিত হয়।