বন্ধুরা আজকে আমি বেল পাতা এবং গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বলছি । আশাকরি আপনাদের এই লেখাটি ভালো লাগবে । যদিও ভালো না লাগে তাহলে একটু কষ্ট করে নিচের কয়েটা লাইন পড়ে দেখার বিশেষ ভাবে অনুরোধ করলাম ।
বেলগাছে ভূত থাকে এই তথ্য নিশ্চয় জানেন? সব ধরনের ভূত না। ভূত সমাজের শ্রেষ্ঠরা । ব্রাহ্মণ ভূত, যার আরেক নাম ব্রহ্মদত্যি । উচ্চশ্রেণীর ভূতরা বেলগাছে থাকবেন এটাই তো স্বাভাবিক । কারণ বেল হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র বৃক্ষ । বেলের তিন পাতা হচ্ছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতীক । শিবের ত্রিনয়নের প্রতীক । সত্ত্ব, রজ এবং তম গুণের প্রতীক । জাগ্রত, সুষুপ্ত এবং স্বপ্নের প্রতীক । বেলপাতা ছাড়া শিবপূজা হবে না । দুর্গাপুজার আদিবাস এবং বোধন দুইই হয় বেলগাছে । বচন তো আছে-
আসছে দুর্গাপূজা
বেলপাতা চাই বোঝা বোঝা ।
হিন্দু ছাত্রদের বই খুললেই পাওয়া যাবে বেলপাতা । কারণ এই পাতা দেবী সরস্বতীরও পছন্দ । সরস্বতী পূজায় নইয়ের ভেতর বেলপাতা দিয়ে সেই বই দেবীর পায়ের কাছে রাখলে দেবী বিদ্যা দেন ।
বেল Rutaceae পরিবারের গাছে । বৈজ্ঞানিক নাম Aegle Mamelos .
বেলের রসায়নঃ- বেলে আছে জটিল কিছু Alraloids (নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগ) যেমনঃ Haplopine, Aegeline, Tambanidem Ditamine ইত্যাদি । আরো আছে Coumarins যেমন- Dimethoxy coumarin, scopoleth, kanthotoxin, marmin, marmasin ইত্যাদি । Sterol আছে দুই ধরনের Betasitosterol and Gamasitosterol . এই খানেই শেষ না আরো কিছু জটিল যৌগ আছে যার একটি হলো Iupeol.
বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয়
বেল অতি পরিচিত ফল । প্রধান ব্যবহার শরবত তৈরিতে । পাকা বেলের শরবতের রেসিপি সবার জানা । আমি কাঁচা বেলের শরবতের একটা রেসিপি দিচ্ছি । কারণ প্রাচীন ভেষজবিদরা পাকা বেলকে বিষবৎ পরিত্যাগ করে কাঁচা বেলকে অমৃতসম গ্রহণ করতে বলেছেন ।
সংহিতায় বলা হচ্ছে-
পক্কং বিল্বং বিষোপমম, আমাং তুং অমৃতোপমম
এখানে কাঁচা বেলের শরবতের রেসিপি দিয়েছেন হেকিম মাওলানা মোঃ মোস্তফা (তিব্বিয়া হাবিবিয়া ইউনানী কলেজ, ঢাকা)
কাঁচা বেলের শরবত
কাঁচা বেল কুটে আধাসের পানিতে সেদ্ধ করে এক পোয়া হলে নামিয়ে ছেকে নিয়ে তাতে মিছরি মেশান এবং জাল দিন । পরে ঠান্ডা করে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে পান করুন ।
পাকা বেলের শরবত এ দেশের অনেক মানুষ খুবই আগ্রহের সঙ্গে খান । তাঁদের কাছে বেলের নানান গুনাগুণের কথা শোনা যায় । প্রাচীন ভেষজ বিজ্ঞান এই কথা বলে না । তাঁদের সকল প্রশংসা কাঁচা বেলের ।
বেলের স্থান হয়েছে ব্রিটিশ ফার্মাকেপিয়ায় । বাংলাদেশ জাতীয় আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারীতে ১৯৯২ ৩৮টি ঔষুধের উপাদান হিসেবে বেলের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার রয়েছে । ১৯টিতে বেলশুঠ, ১টিতে বেলপাতা, ১৭টিতে মূল এবং ১টিতে বেল ছাল ব্যবহার করা হয়েছে ।
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে কাঁচা বেল ফল রানীক্ষেত রোগের ভয়ঙ্কর ভাইরাস ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে । মনে রাখতে হবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অস্ত্র নেই ।
বেলের রয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক ক্ষমতা । অর্থাৎ রক্তে চিনির পরিমাণ কমানোর ক্ষমতা । অস্ত্রনালির পরজীবী নষ্ট করার ক্ষমতা ।
ব্যক্তিগতভাবে বেল আমার পছন্দের ফল না । কাঁচাবেল খাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না । ছোট বেলায় আগুনে পুড়িয়ে কাঁচাবেল খেয়েছি এই স্মৃতি আছে । খেয়ে মহা আনন্দ পেয়েছি এমন স্মৃতি নেই । তবে আমাদের গ্রামে বিশাল আকৃতির কিছু বেল পাওয়া যায়, যার স্বাদ এবং গন্ধ তুলনাহীন ।
এবার ভেষজ ব্যবহারের দিকে যাওয়া যাকঃ-
ঘামের দুর্গন্ধ দূরে
মোটা মানুষরা প্রচুর ঘামেন । তারা যদি বেল পাতার রস পানিতে মিশিয়ে গায়ে মাখেন, তাহলে দুর্গন্ধ দোষ কাটবে ।
সর্দি জ্বর
ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের টোটকা চিকিৎসা । এক চামচ বেল পাতার রস খেলে সর্দি, জ্বর এবং জ্বরভাবের সমাপ্তি ।
শোথ রোগ
হাত পা ফুলে গেলে বেল পাতার রস মধু দিয়ে খাওয়ার বিধান অতি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা ।
আন্ত্রিক ক্ষত রোগ (আলসার)
বেলশুঁঠ বার্লির সঙ্গে মিশিয়ে সেদ্ধ করে খেলে আন্ত্রিক রোগ সারে ।
অনিদ্রা এবং ডিপ্রেশন
বেলের মূলের ছালচূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনিদ্রা রোগ সারে এবং উদাসীন ভাব দূর হয় ।
বেলপাতার একটি বিশেষ ব্যবহার আগে বলেছি- পাঠ্যবইয়ে বেলপাতা রেখে দিলে বিদ্যা বা জ্ঞান অর্জন হয় ।
আধিভৌতিক এই বিষয়ের সাধারণ ফর্মুলাও আছে । প্রতিদিন তিনটা বেলপাতা ঘিয়ে ভেজে খেলে স্মৃতিশক্তি ও মেধা বাড়ে । এটা না কি পরীক্ষিত । আমি পরীক্ষাটা করি নি । স্মৃতিশক্তি ও মেধা যা আছে তাতেই খুশি আছি । তবে ইদানীং পুরানো বন্ধুদের নাম ভুলে যাচ্ছি । ঘিয়ে ভাজা বেলপাতা খেয়ে দেখতে হবে, নাম মনে পড়ে কি-না ...
ধন্যবাদ বন্ধুরা