ধুতুরা
(Datura metel)
চিত্র : ধুতুরা |
অন্যান্য নাম : ধুত্তুর, ঘণ্টা পুষ্প
(সংস্কৃত), ধাতুরা (হিন্দি)।
উদ্ভিদের বর্ণনা : ধাতুরা জীবী বীরুৎ, ২-৬ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে, পাতা সরল,
একান্তর, বৃন্তক, ডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র; পুষ্প একক, পাতার কক্ষ হতে জন্মে থাকে,
বৃহৎ, উভয়লিঙ্গ, পূর্ণাঙ্গ, সনাঙ্গ; বৃত্যংশ
৫টি, নলাকার, সবুজ এবং স্থায়ী;
পাপড়ি ৫টি, যুক্ত, বৃহৎ, ফানেলবৎ;' পুংকেশর
৫টি, পাপড়ির সাথে সংযুক্ত; স্ত্রীস্তবক
দুটি, সংযুক্ত; অমরাবিন্যাস
অক্ষীয়; ফল ক্যাপসিউল, কাঁটাযুক্ত।
ধুতুরা সাধারণত সাদা ধুতুরা এবং কালো
ধুতুরা এই দুই প্রকার হয়ে থাকে। এদের গুণ প্রায় একই প্রকার তবে কালো ধুতুরা সাদা
ধুতুরা হতে অধিক কার্যকরী।
সাদা ধুতুরা দেখতে অনেকটা সবুজাভ-সাদা বর্ণের। সাধারণত সারা বছর ফুল
ও ফল হয়। কালো ধুতুরার পাতা, কাণ্ড, ফল
সকলই বেগুনী বর্ণের, সাধারণত বর্ষাকালে ফুল ও ফল হয়।
সাধারণ গুণ : ধুতুরা কটুরস, উষ্ণবীর্য, ব্রণনাশক, কান্তিবর্ধক, মূর্ছা কারক, ভ্রমকারক, জ্বরনাশক, চুলকানি, চর্মরোগ ও পাঁচড়া নাশক। ইহা শ্বাসকষ্ট ও কাশনাশক, বেদনানাশক, নিদ্রাকর, মূত্রকর ও বায়ুবর্ধক।
ব্যবহার্য অংশঃ পাতা, মূল, ফল এবং বীজ।
ব্যবহার : ধুতুরা রস মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়। এর রস কানে দিলে
বেদনা আরাম হয়। যে কোন ব্যথা বা ফুলায় দিলে ব্যথা ও ফুলা উপশম হয়। পাতার রস এবং
ধূম হাঁপানিতে হিতকর। পাঁচ ফোটা মাত্রায় পাতার রস খেলে ক্রিমি মরে যায়। কারো
কারো মতে ২/৩ ফোঁটা রস ঘোলের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে ক্রিমি নষ্ট হয়ে যায়। টাকে
পাতার রস লেপন করলে টাক আরোগ্য হয় বলেও উল্লেখ আছে। দাঁতের গোড়া ফুলে ধুতুরা
পাতার রসের সাথে এক আনা পরিমাণ আফিম মিশিয়ে ফোলা স্থানে লাগালে উপকার দর্শে।
স্ত্রীলোকের স্তনে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে ধুতুরা পাতার রসের সাথে সামান্য হলুদের
গুঁড়া মিশিয়ে লাগালে ব্যথা ফুলা আরোগ্য হয়। পাতার রসের সাথে সামান্য ঘি মিশিয়ে
ফোড়ায় দিলে ফোড়া শীঘ্র পেকে যায় এবং ফেটে যায়।
হাড়ের জোড়ার বাতজনিত স্ফীতি, ব্যথাযুক্ত টিউমার, স্নায়ুশূল, পায়ের কুনি, নখের ব্যথা, শরীরের কোথাও ব্যথাযুক্ত স্ফীতি প্রভৃতিতে ধুতুরা পাতা প্লাস্টার করলে
অথবা পাতা গরম করে জড়িয়ে দিলে অত্যন্ত উপকার পাওয়া যায়। ধুতুরা পাতার রসের
সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে করলে বাতের ব্যথা কমে যায়। ধুতুরার মূল গুড়া
করে দাঁতের গোড়ায় বেদনা আরাম হয়।
ফলের রস মাথার খুসকি এবং চুল পড়া রোগে
হিতকর। হলুদের সাথে ফল বেটে প্রলেপ দিলে স্তনের ফোলা ও ব্যথা সেরে যায়।
ধুতুরার বীজ স্রাব নিবারক; আস্কেপ নিবারক, ব্যথা নিবারক, উত্তেজক, তিক্ত পেটের গ্যাস নিবারক, হজম কারক, বিষতুল্য এবং মত্ততা (বেহুঁশ) কারক
। পরজীবী জনিত চর্মরোগ, আর্টিকেরিয়া, ফোড়া, টিউমার, অর্শ,
নষ্টপ্রায় দঁাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধুতুরার বীজ বেটে প্রলেপ দিলে
বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। বীজ বেটে তেলের সাথে মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়।
হোমিওপ্যাথিতে ধুতুরাঃ
মহাত্মা হ্যানিম্যান কর্তৃক ১৮০৫ সালে
ধুতুরা হোমিওপ্যাথিতে প্রবর্তিত হয়। এর হোমিওপ্যাথিক নাম স্ট্যামোনিয়াম; ফুল ও ফলসহ সমস্ত উদ্ভিদই ঔষধ প্রস্তুত করণে ব্যবহৃত হয়। নিম্নলিখিত
ফর্মূলা অনুযায়ী এর মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়।
তাজা উদ্ভিদের মণ্ড ৩০০ গ্রাম
পরিশোধিত পানি ২০০ সি.সি.
স্ট্রং অ্যালকোহল ৬৩৫ সি. সি.
এ মিশ্রণকে নিয়মমত আলোড়নের পর ছেঁকে
ফিল্টার করে নিলেই এক হাজার সি. সি. ১x মাদার টিংচার
প্রস্তুত হয়।
ক্রিয়াস্থলঃ মস্তিষ্কে ধুতুরার বিশেষ
ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। রক্ত সংবহন তন্ত্র এবং মেরুদণ্ডের উপরও এর বিশেষ ক্রিয়া
আছে ।
বিশেষ লক্ষণঃ ১। উৎকট পাগলামী সহ
মুখমণ্ডল উজ্জ্বল লাল, ভীতু।
২। মুখমণ্ডল গরম কিন্তু শরীরের অন্যান্য
অংশ শীতল।
৩। ঘুম পেলেও ঘুমুতে পারে না।
৪। মুখ ও গলা শুষ্ক কিন্তু পিপাসা নাই।
উন্মাদ রোগেই ধুতুরা অধিক ব্যবহৃত হয়। শিশুদের তাড়কায় বেলেডোনার চেয়ে
ধুতরাই অধিক কার্যকরী।
নাক্স, ক্যাম্ফর,
লেবুর রস, তামাক, বেলেডোনা প্রভৃতি এর ক্রিয়া নষ্ট করে।
প্রপ্তিস্থান: ধুতুরা বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলাতেই দেখা যায় তবে উত্তরাঞ্চলে অধিক পাওয়া যায়। এটি রাস্তার পার্শ্বে, পতিত জমিতে, জঙ্গলের কিনার প্রভৃতি স্থানে এমনিতেই অযত্নে জন্মে থাকে ।