বাসক পাতার উপকারিতা কি

বাসক ঔষধ বাসক গাছের ছবি বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম বাসক পাতা চেনার উপায় বাসক পাতার সিরাপ বাসক পাতা কোথায় পাওয়া যায় রাম বাসক গাছের উপকারিতা বাসক ফুল

বাসক (Malabar Nut Tree)

ছবিঃ বাসক পাতা


অন্যান্য প্রচলিত নামঃ বাসক, বাশিকা (সংস্কৃত), বাসক (বাংলা), বাহক (আরবী), বাঁসা (হিন্দি) ।

গ্রামের ভাষায় বলেঃ হাড় বক্স

উদ্ভিদের বর্ণনাঃ বাসক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ইহা ৭/৮ ফুট উঁচু হতে পারে। কাণ্ড কাষ্ঠল । পাতা সরল, প্রতিমুখ, বোটা যুক্ত, ইলিপ্টিক-লেনসিওলেট, সূক্ষ্মাগ্র, কিনার মসৃণ, জালিকা শিরাবিন্যাসযুক্ত; মঞ্জরী রেসিমোস (স্পাইক), মঞ্জরী পত্র ও মঞ্জরী উপপত্র বৃহৎ এবং চোখে পড়ার মত। পুষ্প উভয়লিঙ্গী, এক প্রতিসম,অনেকটা বাইলেবিয়েট, পুংকেশর ২টি, পাপড়ি সংযুক্ত, গর্ভকেশর দুটি, সংযুক্ত।

সাধারণ গুণঃ বাসক কটুতিক্তরস, শীতবীর্য, লঘুপাক, খিঁচুনী, জ্বর, শ্বাস, কাশ ও রক্তপিত্ত নাশক। ইহা রক্তদুষ্টি ও কুষ্ঠরোগে উপশমকারক, তৃষ্ণা ও অরুচিতে শান্তিকারক, হাঁপানি ও যক্ষ্মায় উপশমকারক। ইহাতে vascine নামক তিক্ত ও স্ফটিকাকার উপক্ষার আছে। তাছাড়াও আছে adhatodic acid এবং এক প্রকার উদ্বায়ী তৈল ।

ব্যবহার্য অংশঃ প্রধানত পাতা, মূল, ছাল এবং পুষ্পও ব্যবহৃ হয়।

ব্যবহারঃ আমাদের দেশে বাসক সাধারণত কাশি নিরাময়ের জন্যই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাশিতে শুধু পাতার রস সেবনেও ভাল উপকার পাওয়া যায় তবে বিভিন্ন পন্থায় অন্যান্য কিছু দ্রব্য মিশ্রণের মাধ্যমে তাকে আরও অব্যর্থ করে তোলা যায় ।

বাসক পাতা (১০ টা), গোলমরিচ (১০টা), লবঙ্গ (১০টা), পিপুল (৫টা) কন্টিকরি (১ তোলা) একত্রে পিষ্ট করে আধাসের পানিতে জ্বাল দিতে হবে এবং দুই ছটাক পরিমাণ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এই ক্কাথ ১ তোলা মাত্রায় দিনে তিনবার সেবন করলে কঠিন কাশ রোগও আরোগ্য হয়ে থাকে।

বাসক পাতার রস (১ সের), পিপুল (৪ তোলা), ঘি (৪ তোলা) একত্রে সিদ্ধ করতে হবে এবং পরে একে ঠাণ্ডা করে তাতে এক পোয়া মধু মিশালে যে অবলেহ প্রস্তুত হয় তাকে বাসকাবলেহ বলে। এই অবলেহ দিনে ১ তোলা মাত্রায় তিনবার খেলে সর্দি, হাঁপানি, ক্ষয়কাশ প্রভৃতি রোগ সত্বর আরোগ্য হয়।

বাসক পাতা বেশ শক্তিশালী কফ (বক্ষস্রাব) নিঃসারক এবং খিঁচুনী নিবারক। বক্ষ সম্বন্ধীয় রোগে, বিশেষ করে যক্ষ্মায় ইহা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে তাজা পাতার ২-৩ ড্রাম রসের সাথে এক ড্রাম আদার রস ও এক ড্রাম মধু সহযোগে সেবনের ব্যবস্থা করা হয়। পাতার ক্বাথ অথবা চূর্ণ পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানিতে ব্যবস্থা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে পাতার ক্কাথ (১৮০ গেন্র মাত্রার) মধু ও পিপুলের সাথে খেতে দেওয়া হয় শুষ্কপত্র চূর্ণ ৩০ গ্রেন মাত্রায় গ্ৰাণযোগ্য। হাঁপানির জন্য শুষ্ক পাতা চূর্ণের সিগারেট ফোকারও ব্যবস্থা দেওয়া হয়।

পাতার রস ২-৫ ড্রাম মাত্রায় উদরাময় ও আমাশয় রোগে খেতে দেয়া হয় ৷ পাতার রস ম্যালেরিয়া জ্বর নিবারক। পাতার রস আধাসের পানিতে জাল দিয়ে আধ পোয়া থাকতে নামাতে হবে এবং ছেঁকে ক্বাথ দুই তোলা মাত্রায় দিনে দুবার সেবন করলে ম্যালেরিয়া জ্বর সেরে যায়।

পাতার এক তোলা রস মধু ও পিপুলের সাথে খেলে সর্দি আরোগ্য হয়। বাসকের ক্কাথ মধুর সাথে পান করলে ক্ষয়কাশ, রক্তপিত্ত, শ্লেষ্মাপিত্ত প্রভৃতি রোগ দ্রুত সেরে যায়।

বাসক শ্লেষ্মা ও পিত্তনাশক, রক্ত পরিশোধক, সর্দি, কাশি, হাঁপানি, জ্বর, বমন, কুষ্ঠ ও ক্ষয়কাশ নাশক। অনেকের মতে পুরাতন বক্ষপ্রদাহ, হাঁপানি এবং সর্দিজনিত রোগে বাসক অত্যন্ত ফলপ্রদ।

পানির জীবাণু মুক্তকরণঃ

বাসক পাতার ক্কাথ ছোট কীটপতঙ্গের জন্য বিষতুল্য। তাই পানীয় জলে বাসক পাতার চূণ দিলে বিভিন্ন প্রকার জীাণু মরে গিয়ে পানি বিশুদ্ধ হয়। এক কলসী পানিতে ৩/৪টি পাতা কুচি কুচি করে কেটে ভিজিয়ে রাখলেই পানি জীবাণুমুক্ত হয়। বসন্তের সংক্রমণের সময় বাসক পাতা সিদ্ধ পানি পান করলে আর বসন্ত সংক্রমিত হবার ভয় থাকে না।

বাসকের মূল এবং ছাল ও পাতার গুণবিশিষ্ট। মূল বক্ষস্রাব নিঃসারক, খিঁচুনী নিবারক, পচন নিবারক এবং ক্রিমিনাশক । ইহা ডিপথেরিয়া এবং গনোরিয়াতেও উপকারী।

বাসক পাতা গরুর চেনার সাথে বেটে খোস-পাঁচড়ায় লাগালে সত্বর আরোগ্য হয়। 


ঘামের দুর্গন্ধঃ

শরীরের বগলতলায় বা অন্যত্র ঘামে দুর্গন্ধ হলে বাসক পাতার রস সেখানে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে । বাসক পাতা ছেঁচে মণ্ড করে অল্প গরম করে কাপড়ে পুটলি বেঁধে সেঁক দিলে অর্শের বলির যন্ত্রণা ও ফুলা কমে যাবে।

বাসক পাতার রসের সাথে সামান্য শঙ্খভস্ম মিশয়ে গোছলের ২/৩ ঘণ্টা আগে শরীরে মাখলে ক্রমান্বয়ে শ্যামবর্ণ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণে পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ গায়ের রং ফর্সা হয়।

৭/৮ গ্রাম পরিমাণ বাসকের ছাল চার কাপ পরিমাণ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ পরিমাণ থাকতে নামিয়ে ফিল্টার করে (ছেকে প্রত্যহ কয়েকবার খেলে অম্লপিত্ত রোগ আরোগ্য হয়। এভাবে খেলে পেটের ক্রিমিও মরে যায়।

হোমিওপ্যাথিতে বাসকের ব্যবহারঃ

ভারতীয় ডাঃ শরৎচন্দ্র ঘোষ সর্বপ্রথম বাসককে হোমিওপ্যাথিতে প্রবর্তন করেন। তাজা পাতা হতে এর মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়। নিম্নলিখিত ফর্মূলা অনুসারে বাসকের এক হাজার সি. সি. মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয় ।

 

তাজা পাতার মণ্ড         ৩৭০ গ্রাম

স্ট্রং অ্যালকোহল          ৯০০ সি. সি.

সুনির্দিষ্ট পন্থায় ৭/৮ দিন শীতল-অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ক্রমাগত আলোড়নের পর ছেঁকে ফিল্টার করে নিলেই এক হাজার সি. সি. ১. অর্থাৎ ১x শক্তিসম্পন্ন মাদার

 

টিংচার প্রস্তুত হয়। পরবর্তী শক্তিকরণ ডিসপেনসিং অ্যালকোহল দ্বারা করতে হবে।

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যঃ হোমিও বাসক ঔষধের বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

১। বুকে ব্রঙ্কাইটিসের মত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

২। শ্লেষ্মা চটচটে ।

 ৩। ক্ষতকর ও শুষ্ক সর্দি।

৪। কাশি অনেকক্ষণ ধরে চলে এবং মনে হয় যেন বুক ফেটে যাবে ।

৫। বারে বারে হাঁচি হয় এবং সেই সাথে চক্ষুদিয়ে পানি পড়ে।

৬। কোন বস্তুর ঘ্রাণ ও স্বাদ পাওয়া যায় না।

৭। সকালে হাতমুখ ফুলা থাকে।

 

ক্রিয়াস্থলঃ সেরিব্রো-স্পাইনাল স্নায়ুমণ্ডলী ও শ্বাসযন্ত্রের উপর বাসকের ক্রিয়া অধিক পরিলক্ষিত হয়। ইহা শ্বাসযন্ত্রের সকল প্রকার পীড়ার উত্তম ঔষধ।

কাশিঃ অনবরত ভীষণ কাশি। বুকে শ্লেষ্মা জমা হয়ে আছে মনে হলেও গয়ার অতি অল্পই নির্গত হয়। রাত্রিতে কাশি বাড়ে। গয়ার রক্তমিশ্রিত বা হলদে। অর্থাৎ সব ধরণের শুষ্ক কাশিতে বাসক উপযোগী ।

প্রাপ্তিস্থানঃ বাসক বাংলাদেশের সকল জিলায় পাওয়া যায়। এটি সাধারণত বাড়ির চারদিকে বেড়ার জন্য লাইন ধরে লাগানো হয়ে থাকে। ডাল ভেঙে মাটিতে লাগালেই বাসক গাছ জন্মে থাকে। এর জন্য কোন প্রকার বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাসককে টবেও জন্মানো যায়।


tag...

বাসক ঔষধ
বাসক গাছের ছবি
বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম
বাসক পাতা চেনার উপায়
বাসক পাতার সিরাপ
বাসক পাতা কোথায় পাওয়া যায়
রাম বাসক গাছের উপকারিতা
বাসক ফুল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন