আলকুশি বীজের উপকারিতা
চিত্রঃ আলকুশী ফল |
অন্যান্য নামঃ আত্মগুপ্তা, স্বয়ংগুপ্তা, মহর্ষভী, কুণ্ডলী, দুঃস্পর্শা, রোমালু, শিম্বী ইত্যাদি।
উদ্ভিদের বর্ণনা: আলকুশী একটি বর্ষজীবী লতানো গাছ। দেখতে অনেকটা সিম গাছের মতই দেখা যায়। পাতা যৌগিক, তিনটি পত্রখণ্ড নিয়ে গঠিত, একান্তর, বৃত্তযুক্ত, পত্রখণ্ড নরম এবং ওভেট-রম্বয়েড, পাতার নিচের পৃষ্ঠে ছোট ছোট রোম আছে। মঞ্জরীদণ্ড লম্বা, অনিয়ত পুষ্প উভয়লিঙ্গ, এক প্রতিসম, গর্ভপাদ পুষ্পী। বৃত্যংশ পাঁচটি, এতে বিষাক্ত রোম আছে। পাপড়ি পাঁচটি, লালচে-বেগুনী বর্ণের। পুংকেশর ১০টি, গর্ভকেশর একটি। ফল পড়জাতীয়, ১–৪ ইঞ্চি লম্বা, স্ফীত, একটু বাঁকা; প্রতি ফলে ৫-৬টি বীজ থাকে। ফল বিষাক্ত রোম দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। শুষ্কাবস্থায় বিষাক্ত রোমগুলি সামান্য নাড়াচাড়ায় ঝরে যায়।
সাধারণ গুণ: মধুর-তিক্ত রস, গুরুপাক, অতিশয় শুক্রবর্ধক, বল বর্ধক, বায়ু প্রশমক, রক্ত পরিষ্কারক, কফ ও পিত্তনিবারক।
ব্যবহার্য অংশঃ বীজ ও শিকড়। মাত্রা-বীজ চূর্ণ এক আনা, মূলের রস এক তোলা।
ব্যবহার: আলকুশীর প্রধান ব্যবহার বাজীকর ঔষধ হিসেবে। যে ঔষধ অতিমাত্রায় শুক্রসৃষ্টি করে অথবা অশ্বের মত রমণে প্রবৃত্ত করে তাকে বাজীকর ঔষধ বলা হয়।
আলকুশীর বীজকে রাত্রিতে পানিতে (অথবা গরম দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পরদিন সকালে বীজের খোসা ছাড়াতে হবে। খোসা ছাড়ান বীজকে এমনিতে অথবা দুধ-পানিতে একটু সিদ্ধ করে শিলে পিষে নিতে হবে এবং অল্প ঘি-এ ভাজতে হবে। পরে এর সাথে চিনি মিশাতে হবে। এ থেকে সকাল বিকাল চা চামচে ২ চামচ করে খেতে হবে এবং ঔষধ খবার পর অন্তত এক কাপ দুধ খেতে হবে। এভাবে কিছুদিন খেলেই বাজীকরণ নির্বাহ হবে। যাদের ধ্বজভঙ্গ, শুক্রাতারল্য বা স্ত্রীলোক দর্শনেই শুক্রক্ষরণ হয় তাদের জন্য এটি অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু । আলকুশীর বীজ চূর্ণ করে মাষ কলাইর সাথে জুস তৈরি করে খেলেও বলবান ও বাজীকরণ নির্বাহ হয়।
সন্তান প্রসব অথবা অন্য কোন কারণে স্ত্রীলোকের যোনী প্রসারিত হয়ে গেলে আলকুশীর শিকড়ের ক্বাথে একখণ্ড পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে তা যোনীতে ধারণ করলে যোনী সঙ্কীর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
বিছা ও অন্যান্য বিষাক্ত পোকা-মাকড়ে দংশন করলে তাতে আলকুশীর বীজ চূর্ন করে লাগালে বিষ নষ্ট হয়ে যায় । এক প্রকার বাতব্যাধি আছে যাতে হাত উপরে উঠানো যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে আলকুশী শিকড়ের রস কয়দিন নিয়মিত খেলে তা সেরে যায়। আলকুশীর বীজ ঋতুস্রাবকারী এবং বেশ বলকারক।
আলকুশীর ফলের উপরের শুয়া অত্যন্ত বিষাক্ত। এটি লাগলে ত্বকে অত্যন্ত চুলকানি ও জ্বালাযন্ত্রণা আরম্ভ হয়। কাজেই বীজ সংগ্রহ কালে অত্যন্ত সাবধান ও যত্নবান হওয়া অপরিহার্য।
প্রাপ্তিস্থান : আলকুশী বাংলাদেশের প্রায় সকূল অঞ্চলে বনের ধারে দেখা যায় । ঢাকার অদূরে চন্দ্রা ও অন্যান্য বনাঞ্চলে এটিকে প্রচুর দেখা যায়। বীজ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত জায়গায় এটিকে লাগানো যায়।